ফ্রিল্যান্সারদের নিয়মিতভাবেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
ফ্রিল্যান্সিং কি সহজ ? না কঠিন ? আমি কি পারব ?
সত্যি বলতে কি ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যেখাতে একে নিয়মিত কাজ হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। প্রতিনিয়ত আরো বেশি মানুষ যোগ দিচ্ছে একাজে। যদি এই দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে অন্য পেশার ক্ষেত্রেও কি প্রশ্ন করতে পারেন, শিক্ষকতা কি সহজ ? কিংবা ডাক্তারী করা কি সহজ ?
এধরনের প্রশ্ন করা হয় না। কারন ফ্রিল্যান্সিং বলতে অন্য নির্দিস্ট একটি পেশা বুঝায় না। একজন শিক্ষক কিংবা ডাক্তারও ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন।
অন্য পেশা যদি কঠিন হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং অবশ্যই কঠিন। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনার কারনে সাধারনভাবে ফ্রিল্যান্সিংকে সহজ মনে করা হয়। বিষয়গুলি তুলে ধরা হচ্ছে এখানে;
. ফ্রিল্যান্সিং শখ না
ফ্রিল্যান্সিং অন্যান্য পেশার মতই নির্দিস্ট কাজ। শুধুমাত্র শখ করে এখানে ভাল করার সম্ভাবনা নেই। কোন ফ্রিল্যান্সারকে কাজ করতে দেখলে মনে হতেই পারে তিনি মজার কিছু করছেন। কোন কাজ পছন্দ হলে সেদিকে যাচ্ছেন, পছন্দ না হলে ছেড়ে দিচ্ছেন। কখন কাজ করবেন সেটা নিয়ে কেউ খবরদারী করছে না। বাস্তবে ফ্রিল্যান্সারকে তার সমস্ত কাজের হিসেব ঠিকভাবে রাখতে হয় এবং সব কাজই সময়মত শেষ করতে হয়।
. একাধিক কর্তৃত্ব মেনে চলা
নিয়মিত চাকরীর সময় নির্দিস্ট বসের অধীনে কাজ করতে হয়। ধীর্ঘদিন কাজ করলে একসময় তার পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদির সাথে মানিয়ে নেয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সবসময়ই নতুন নতুন ক্লায়েন্টের কাজ করতে হয়। তাদের প্রত্যেকেরই কাজের ধরন, মানষিকতা, পছন্দ-অপছন্দ ভিন্ন। সেকারনে অতিরিক্ত সচেতনতা প্রয়োজন হয়।
. ভাল এবং মন্দ সময়
ফ্রিল্যান্সিং কাজে ভাল সময় – মন্দ সময় কথাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। একসময় এত বেশি কাজ পেলেন যে সেগুলি করা কষ্টকর, অন্যসময় আদৌ কোন কাজ পেলেন না। কিছু নিয়ম মেনে এই সমস্যা মোকাবেলা করা গেলেও পুরো সমাধান কারো জানা নেই।
. কাজ নেই – আয় নেই
ফ্রিল্যান্সারের আয় সরাসরি নির্দিষ্ট কাজের সাথে সম্পর্কিত। শারীরিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে অন্য যে কারনেই হোক, কাজ শেষ না হলে আয়ের সম্ভাবনা নেই। যে কারনে অনেক সময়ই ফ্রিল্যান্সার যখন কাজ থাকে তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে অতিরিক্ত কাজ করেন।
. সবসময়ই কোন কাজ থাকে
নিয়মিত চাকরীর ছুটি নির্দিস্ট। দিনের কাজ শেষে ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি, বিশেষ দিনের ছুটি ইত্যাদি নিশ্চিন্তে উপভোগ করা যায়। ফ্রিল্যান্সারের কোন ছুটি নেই। হাতের কাজ শেষ হওয়ার পরও নিজের প্রচার বাড়ানো, কাজের চেষ্টা করা, দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি কাজ করতে হয়।
এই বিষয়গুলির বাইরে আরো অনেক বিষয় রয়েছে বিষয়ভিত্তিক। কমবেশি সব ফ্রিল্যান্সারকেই সেগুলির মুখোমুখি হতে হয়।
কাজেই কেউ যদি প্রশ্ন করে, ফ্রিল্যান্সিং সহজ কি-না, হ্যা কিংবা না এভাবে উত্তর না দিয়ে তাকেই আরো জানতে পরামর্শ দিন।
অল্প পরিশ্রমে বেশি সাফল্য পেতে ফ্রিল্যান্সার কি করতে পারেন
সফল হওয়ার নানা পরামর্শ দিয়ে বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছেন ডেল কার্নেগী। তার একটি উদাহরন একজন সেলসম্যান সম্পর্কে। তিনি প্রতিদিন নানা যায়গায় ঘোরেন ক্রেতা তৈরী করার আশায়। যা পরিশ্রম হয় সে অনুযায়ী ফল পান না। একদিন তিনি ভাবতে বসলেন। সম্ভাব্য ক্রেতাদের তালিকা তৈরী করলেন। যেখানে সম্ভাবনা বেশি তাদের শুরুতে রাখলেন। এরপর এদের কাছে বেশি সময় দিতে শুরু করলেন। অন্যদের সময় দেয়া বন্ধ করলেন।
ফল হিসেবে কিছুদিনেই দেখা গেল তার বিক্রি বেড়েছে, অন্যদিকে পরিশ্রম কমেছে। যেখানে সম্ভাবনা কম সেখানে তিনি সময় ব্যয় করছেন না।
ফ্রিল্যান্সার কি এই নিয়ম কাজে লাগাতে পারেন ?
উত্তর যে হ্যা হবে এতে কারোই সন্দেহ নেই। বরং সত্যিকারের প্রশ্ন, সেটা কিভাবে সম্ভব ?
কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় এনে ফ্রিল্যান্সার এই নিয়ম কাজে লাগাতে পারেন।
. কাজ যাচাই করুন
জবসাইটে বহু কাজ রয়েছে। ইচ্ছে করলেই যতটা সম্ভব বেশি সময় ব্যয় করে বেশিসংখ্যক কাজে অংশ নিতে পারেন।
সেই বিক্রেতার উদাহরন বিবেচনায় আনুন। অংশ নেয়ার অর্থ সেই কাজ থেকে উপার্জন হওয়া না। বরং যেকাজে শেষ পর্যন্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি শুধুমাত্র সেকাজে সময় দিন।
ফ্রিল্যান্সারের ডিজাইন প্রতিযোগিতার উদাহরন বিবেচনা আনতে পারেন।
ডিজাইন জমা দিলে আপনি পয়েন্ট পাচ্ছেন, ডিজাইনের ৪ বা ৫ ষ্টার রেটিং এর জন্য পয়েন্ট পাচ্ছেন। অন্যদিকে ক্লায়েন্ট ডিজাইন বাতিল করলে পয়েন্ট বাদ যাচ্ছে। কখনো এমন হতে পারে আপনার পরিশ্রমের পুরস্কার হচ্ছে অন্য কাজের জমা আয় নষ্ট হওয়া। যদি পয়েন্ট বাড়ার সম্ভাবনা থাকে শুধুমাত্র তাহলেই অংশ নিন। নইলে সেটা বাদ দিয়ে অন্য কাজের দিকে দৃষ্টি দিন।
. কাজের অর্থমুল্য বিবেচনায় রাখুন
বেশি টাকার কাজ করলে আয় বেশি। সেকারনে বেশি টাকার কাজে বেশি সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখুন। কোন ক্লায়েন্ট বেশি টাকা দিচ্ছেন কারন তিনি উচু মানের কাজ চান। সেই কাজে সেরা ডিজাইনাররা অংশ নেবেন এটাই স্বাভাবিক। সেকারনে সেখানে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত বেশি।
আপনার জন্য কোনটা লাভজনক বিবেচনা করুন। একটি কাজ করে ৫০০ ডলার আয় হতে পারে, ৫০ ডলারের ১০টি কাজ করেও একই পরিমান আয় হতে পারে। যেটা মানানসই সেটা বেছে নিন।
. ক্লায়েন্ট যাচাই করুন
সাধারনভাবে ক্লায়েন্ট যাচাই করার বিষয়টি ফ্রিল্যান্সার খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। অনেকে তাদের নাম দেখাও প্রয়োজন বোধ করেন না। অথচ বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপুর্ন হয়ে দাড়াচ্ছে। অনেক ফ্রিল্যান্সার নিজেই ক্লায়েন্টে পরিনত হচ্ছেন। ৫০০ ডলারের কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকলে সেটা নিচ্ছেন, ফ্রিল্যান্সারকে ৫০ ডলার দিয়ে সেকাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
কোন ক্লায়েন্ট অত্যন্ত সহানুভৃতিশীল। সবধরনের পরামর্শ দিয়ে ভাল কাজ করতে উতসাহ দেন। কেউ ঠিক বিপরীত। একজন বলেই বসলেন অংশ নেয়া ডিজাইনারদের থেকে তার ৮ বছরের মেয়ে ভাল ডিজাইন করতে পারে।
কোন ক্লায়েন্টের আচরনগত সমস্যা দেখলে সেকাজ থেকে দুরে থাকুন। প্রয়োজনে তাদের নামের তালিকা তৈরী করুন যেন ভবিষ্যতে সহজে তাদের চিনতে পারেন।
. নিজেকে যাচাই করুন
অনেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজে অংশ নেন পুর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই। লোগো ডিজাইন করেছেন অথচ লোগোর সাধারন নিয়মগুলি মানেননি, এমনকি কোন সফটঅয়্যারে কাজ করবেন, কোন ফরম্যাটে কাজ দেবেন এবিষয়টিও জানা প্রয়োজনবোধ করেননি। এভাবে নিজেকে হাস্যকর করে তোলা হয়।
যে কাজই করুন, সেকাজের জন্য আপনার দক্ষতা কতখানি যাচাই করে নিন। অভিজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে তাদের মতামত নিন। দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে সেটা পুরন করুন। কাজ পাওয়ার জন্য যে পরিশ্রম হয় সেই পরিশ্রম দক্ষতা বাড়ানোতে ব্যয় করুন।
প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং কাজ যেমন পৃথক, ক্লায়েন্ট পৃথক তেমনি ফ্রিল্যান্সারও প্রত্যেকে নিজের মত। একজনের নিয়ম অন্যজনের কাজে লাগবে এমন কথা নেই। সেকারনেই প্রতিটি কাজ, প্রতিটি ক্লায়েন্ট এবং নিজেকে ভালভাবে জানা প্রয়োজন।
এরফলে আপনি কম পরিশ্রমে বেশি সাফল্য পেতে পারেন।
Join The Community